“আমরা আনিব রাঙা প্রভাত” প্রজেক্ট টিমের ভলান্টিয়ার ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

গত ২৯ নভেম্বর (রবিবার) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “আমরা আনিব রাঙা প্রভাত” এর ভলান্টিয়ার ওরিয়েন্টেশন। অনুষ্ঠানে  অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডঃ উজ্জল কুমার প্রধান, স্থানীয় সরকার এবং নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, ফোকলোর বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বাকি বিল্লাহ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল নাঈম, সিপিজে প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়া উদ্দিন, জাককানইবি প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক নিহার সরকার অংকুর সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ।

“আমরা আনিব রাঙা প্রভাত” এমন একটি উদ্যোগ যা পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করছে। করোনাকালীন সময়ে পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে নারীদের উল্লেখযোগ্য ক্ষমতায়ন হলেও পারিবারিক সহিংসতা ও যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানানোকে অনেক নারীই ট্যাবু বলে মনে করেন। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক বার্তা তথ্যচিত্র, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে পারিবারিক সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং এর পাশাপাশি ভিকটিমদের মানসিক পরিচর্যা, কাউন্সেলিং, অসহায়-নিপীড়িত নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রকল্পও এর আওতাভুক্ত। যেকোনো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়া এবং এ সকল অপরাধ বন্ধের সর্বাত্মক সহযোগিতায় “আমরা আনিব রাঙা প্রভাত” আত্মপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জাককানইবি প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, সমাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক তুলে এনেছে আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত। আমাদের দেশে পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি থেকে নির্মূল করতে অবদান রাখবে এই প্রজেক্ট। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সবাই পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির ধারনা সম্পর্কে জানতে পারবে তারা তাদের পরিবারকে সচেতন করতে পারবে, পরিবর্তনের সূচনা করবে এই প্রজেক্টের মাধ্যমে। সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে এই আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত।  এই ধরনের উদ্যোগ সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবসময় একাত্ম থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং মঙ্গল কামনা করেন।

“আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত” প্রকল্পটির মেন্টর, স্থানীয় সরকার এবং নগর উন্নয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উসওয়াতুন মাহেরা খুশি বলেন, প্যানডেমিকের এই সময়ে আমরা যে সবার সাথে যোগাযোগ করছি,  আইডিয়া শেয়ার করছি এজন্য আমরা কিছুটা হলেও করোনার বিরূপ প্রভাব থেকে বের হতে পারছি। যেহেতু সবাই এখন ঘরেই বেশিভাগ সময় থাকছি, তাই এই সময়কে কাজে লাগিয়ে “আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত” গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে। তিনি বলেন, পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি কি সেটা যখন আমি জানবো, বুঝবো, মানবো তখন অপরকেও সচেতন করতে পারবো। তিনি আরো বলেন, খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে আমাদের আইডিয়া শেয়ার করতে পারি, সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। বর্তমান সময়ের জন্য খুবই সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে তিনি এই প্রকল্পটিকে সাধুবাদ জানান।

ফোকলোর বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং উইমেন পিস ক্যাফের মেন্টর জনাব বাকি বিল্লাহ বলেন, এই পেন্ডেমিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সবাই ঘরে আটকে আছে। এর মধ্যে সবার শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এইসকল খারাপ প্রভাবগুলি কাটিয়ে উঠার জন্য এরকম কাজগুলো করা জরুরী। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবেও এই প্রজেক্টের কাজগুলো নিজেদের উন্নয়নে এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং উইমেন পিস ক্যাফের মেন্টর জান্নাতুল নাঈম বলেন, উইমেন পিস ক্যাফের ৪ টি টিম যারা সমাজে সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পরা নারীদের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে তাদের সবাইকে তিনি অভিনন্দন জানান। শান্তিপূর্ণ সমাজ নির্মানে নারীর মতামতও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে সমাজ এবং দেশ আলোকিত হবে, কল্যানের পথে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

সিপিজের প্রজেক্ট ম্যানজার জিয়া উদ্দীন বলেন,  সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস এর সহায়তায় এবং ইউএন উইমেন এর অর্থায়নে এই প্রজেক্ট। উইমেন পিস ক্যাফের মেম্বারদের অনেকগুলো ট্রেনিং দেয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত। সিপিজের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয় তিনি তুলে ধরেন এবং উইমেন পিস ক্যাফের ৪টি প্রকল্প এই লক্ষ্য পূরণে কাজ করবে। তিনি আরো বলেন, উইমেন পিস এন্ড সিকিউরিটি,  ইয়ুথ পিস এন্ড সিকিউরিটি,  এসডিজি ১৬ টার্গেটে কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন। নতুন ২৫ জন ভলান্টিয়ারদের তিনি শুভেচ্ছা জানান এবং এই ২৫ জনের মাধ্যমে আরো ৫০ জন অসহায় নারীদের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে তিনি আশা করেন।

জাককানইবি প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক, নিহার সরকার অংকুর বলেন, “আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত” সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি নজির সৃষ্টি করতে পারবে এবং পরিবর্তন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

সিপিজের প্রজেক্ট এসিস্ট্যান্ট রওনক জাহান মৌশী বলেন, সিকিউরিং পিস অফ এন্ড অনলাইনের আওতায় একটি প্রজেক্ট হচ্ছে আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত। ২৫ জন ভলান্টিয়ার সংগ্রহ করা হয়েছে,  তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে যেন তারা তাদের কমিউনিটিতে যতটা সম্ভব সচেতনতা তৈরি করতে পারে,  তারা আরো ৫০ জন কমিউনিটি উইমেনকে তারা এনগেইজ করবে, সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে,  কোভিড ১৯ এর সময়ে যে সহিংসতার হার বাড়ছে তা কমিয়ে আনতে এবং সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় প্রজেক্টটি ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা রাখেন।

অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন “আমরা আনিব রাঙা প্রভাত” এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সানজিদা হক ভাবনা। করোনাকালীন সময়ে নারীদের পৃত সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি সম্পর্কে সচেতন করতে কাজ করছে “আমরা আনিবো রাঙা প্রভাত”। করোনার মধ্যে শক্তিশালী হাতিয়ার অনলাইন প্লাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে একটি ফেসবুক পেইজ এবং গ্রুপ খোলা হয়েছে। এই প্রজেক্টের বাস্তবায়ন করার জন্য ইতোমধ্যে ২৫ জন ভলান্টিয়ার সংগ্রহ করা হয়েছে যারা এই প্রজেক্ট এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করবেন বলে তিনি আশা করেন। নারী সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন ভোরের সূচনা করবে “আমরা আনিব রাঙা প্রভাত”।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন প্রকল্প টিমের সদস্য সাগর সরকার এবং সদিয়া বিনতে সিদ্দিক।