
আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসাথে
“আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসাথে’ এই প্রতিপাদ্যে আজ ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস।
আত্মহত্যা শব্দটার সাথে আমরা যতটা পরিচিত,আত্মহত্যার কারণ,আত্মহত্যা করার মানসিকতা তৈরি,আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায়গুলো নিয়ে তেমনভাবে সচেতন নই।আমাদের আশে-পাশে যখন আমরা কারো আত্মহত্যা করার ঘটনা জানতে পারি,কয়েকদিন তা নিয়ে কথা বলি,ঐ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও জেনে বা না জেনে সামাজিক ভাবে দোষারোপ করি তারপর সব স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিই।কিন্তু মূল যে গুরুত্ব সেই ধরনের মানসিকভাবে খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষগুলোকে নিয়ে আর ভাবিনা।
অকাল মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ আত্মহত্যা এবং সচেতনতা বাড়াতে এই উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ক্রিয়াকলাপ অনুষ্ঠিত হয়। পৃথিবীতে প্রতিবছর আট লাখ লোক আত্মহত্যা করে। যতজন আত্মহত্যা করে, তার ২৫ গুণ বেশি লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং তার চেয়ে ও অনেক বেশি লোক আত্মহত্যা করার কথা চিন্তা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা সম্পন্ন প্রতিটি ব্যক্তির জন্য, ২০ জন বা তারও বেশি লোক তাদের জীবন শেষ করার চেষ্টা করতে পারে।
আত্মহত্যা অকাল মৃত্যুর একটি প্রধান প্রতিরোধযোগ্য কারণ যা মনো-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত ঝুঁকির দ্বারা প্রভাবিত হয় যা বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
আত্মহত্যার কারণগুলি অনেক, এবং আত্মঘাতী চিন্তাভাবনাগুলি যে মানসিক কারণগুলি হতাশার বা হতাশার অনুভূতির দিকে নিয়ে যেতে পারে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে আছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রিয়জন হারানো, তর্ক-বিবাদ, আইনগত বা কর্মক্ষেত্রের সমস্যাসহ নানাবিধ সামাজিক, ব্যক্তিগত কারণ, বংশধারার প্রবণতা,মনস্তাত্ত্বিক কারণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা, দুর্যোগ, যুদ্ধ বা সংঘাতের অভিজ্ঞতা, বৈষম্যের অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা এবং সামাজিক সহায়তার অভাব,ক্ষতি বা দ্বন্দ্ব,পূর্ববর্তী আত্মহত্যার চেষ্টা,মানসিক অসুস্থতা যেমন ডিপ্রেশন, মাদকাসক্তিসহ অন্যান্য মানসিক রোগ, ড্রাগ এবং অ্যালকোহলের অপব্যবহার,দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা,আর্থিক ক্ষতি,আত্মহত্যার পারিবারিক ইতিহাস এগুলো গুরুত্ববহ। স্ব-ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরাও আত্মহত্যার চেষ্টা বা সম্পূর্ণ করার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই প্রত্যেকটি কারণই কিন্তু সময়ের সাথে সাথে চেষ্টা ও একাগ্রতায় একসময় নিরাময় ঘটে।খারাপ সময়টুকু পার হতে পারলেই ভবিষ্যতের অপার সম্ভাবনার হাতছানি অনুভব করা যায়।
আত্মহত্যাই শেষ কথা নয়,এই বিষয়টিকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে।যত খারাপ সময়ই আসুক তা কেটে যাবে এই মনোবল রাখা জরুরী। নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে।
আত্মহত্যার একটি মূল কারণ হতাশা,বিষন্নতা। তরুণ তরুণীদের এই হতাশা ও বিষন্নতা এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য ইতিমধ্যে উইমেন পিস ক্যাফের পক্ষ থেকে সেমিনারসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক আড্ডার আয়োজন করা হয়েছিলো।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উইমেন পিস ক্যাফে শুরু কাজ করে যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের গুরুত্ব, ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা, র্যাগিং প্রথার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবে সংগঠনটি।
আত্মহত্যা যে প্রতিরোধযোগ্য, সে ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা,আত্মহত্যা বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো, মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে প্রচলিত অজ্ঞতা কমানোর চেষ্টা করা এখন প্রত্যেকটি পরিণত বয়সের মানুষের দায়িত্ব মনে করে কাজ করা সময়ের দাবি।
লেখকঃ জাকিয়া সুলতানা
কার্যনির্বাহী সদস্য
উইমেন পিস ক্যাফে
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
নোট: উইম্যান পিস ক্যাফের নানা কার্যক্রমের সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের, সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস (সিপিজে)। ২০১৮ সালে ‘এমপাওয়ার্ড উইম্যান পিসফুল কমিউনিটি’ প্রকল্পের প্রথম ধাপে উইম্যান পিস ক্যাফে শান্তি পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর ক্ষমতায়ন, উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগ, নারীদের করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন কমিউনিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ ও উদ্যোক্তা তৈরিতে একটি সৃষ্টিশীল প্লাটফর্ম হিসেবে সর্বপ্রথম দেশের আঞ্চলিক দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ( জাককানইবি ও বেরোবি ) তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। তারই ধারবাহিকতায় ইউএন উইমেনের অর্থায়নে তৃতীয় ধাপে ‘সিকিউরিং দ্যা পিস অফ অ্যান্ড অনলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস (সিপিজে), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের এই ফেইজে নারীদের, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এবং সমাজের তৃণমূল স্তরের নারীদের নানাবিধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা এবং নতুন করে দেশে আরো দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় (ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) উইম্যান পিস ক্যাফে স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তৃণমূল পর্যায়ে কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং অফলাইন এবং অনলাইনে শান্তি, সৌহার্দ্য এবং নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে এই প্রকল্পটি।